তখন আমি খুব ছোট,প্রথম দাঁত নড়বড় করছে,মা ডেন্টিস্টের ভূমিকায়,দাঁতে সুঁতা বেঁধে দাঁত ফেলার জন্য রেডি..হঠাত আমার কি হইল জানি না,চোখের পলকে নিজেরে আবিষ্কার করলাম আব্বুর কোলের ভিতর।আমি দাঁতে হাত দিতে দিবই না,আর আম্মু ফেলবেই!মহা যন্ত্রনা!!দাঁতটা ফেলবার সময় আব্বুর দিকে তাকায় ছিলাম,বেচারাকে দেখে মনে হচ্ছিল আমার দাঁত না,তার তিন চারটা দাঁত একসাথে ফেলে দিচ্ছে কেউ!!
আব্বুর কোলে ওইদিনই মনে হয় প্রথম স্বেচ্ছায় উঠছিলাম! হুম,আমি মোটেও আমার বাপ নেওটা বেটি না,এখনো আক্ষরিক ভাবেই মার আচল ধরে ঘুরে বেড়াই।বাবার সাথে আমার পছন্দও মিলে না,আমার এইটা ভাল লাগে তো আব্বুর তার ঠিক উল্টাটা পছন্দ!কিন্তু কেন জানি যখন খুব বেশি বিপদে পড়ি,চারপাশ পুরাই অন্ধকার লাগে তখন মনের ভিতর এই বিশ্বাসটা কাজ করে, কেউ না পারলেও আব্বু সমাধান বের করে ফেলবে! কিন্তু তাও বিপদের কথাটা তার কানে তুলি মার মাধ্যমে,নিজে বলি না!!
আমি এমনই বদ মেয়ে, কিছুদিন আগের ঘটনা, আইডি হারায় তখন আমি অকুল পাথারে,ওইদিকে সেকেন্ড ইয়ার ফাইনালের ফর্ম দিবে না আইডি ছাড়া, আরো কিছু ঝামেলা একসাথে এসে জুটছিল ওই সময়।চরম হতাশায় ফুটপাতে বসে আছি,এমন সময় আব্বুর ফোন,টেলিপ্যাথি! বাপ মেয়ের টেলিপ্যাথি!
সব শুনে আব্বু খুব বেশি কিছু বলে নাই,শুধু বলছিল,তুমি আমার মেয়ে,এই সমস্যা তোমার কাছে কিছুই না, তুড়িতে তুমি এইটা সলভ করবা, কারন তুমি আমার মেয়ে!! আব্বুর এইসব পিচ্চি কথাগুলা কিভাবে জানি টনিক হিসাবে কাজ করে,আমি এখনো বুঝে উঠতে পারি না!বুঝব কিভাবে? বটবৃক্ষকে বোঝাটা কি আর চাট্টিখানি ব্যাপার?দুনিয়ার সব বাবাই তো এইভাবেই আগলায় রাখে তার বাচ্চাদের,সব বাবাই সেরা।ভাল থাকুক সব বাবারা!তাদের বাচ্চাগুলারে সাথে নিয়ে!
লেখিকা, রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়